মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০০৯

শত তোরণ : ‘অভিভাবক’ বলেই এই সংবর্ধনা!


এক সপ্তাহ ধরে চলছে প্রস্তুতি। তাঁকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে নির্মিত হয়েছে শতাধিক তোরণ। তাঁর ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে শহর। তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছবিঃ রহমান আরিফ

শত তোরণ
‘অভিভাবক’ বলেই এই সংবর্ধনা!

তিনি মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নন, এমনকি সাংসদও নন, তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন ওরফে হিরণের ভাষায়, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘অভিভাবক’।
এই তিনি হলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আজ বুধবার ঢাকা থেকে তিনি বরিশাল জেলা শহরে আসছেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে তাঁকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সমর্থকেরা প্রস্তুতি নিয়েছেন এক সপ্তাহ ধরে।
তাঁকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা থেকে বরিশাল শহর পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। শহরের বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে তাঁর ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও প্নাকার্ড। এর আগে শেষবার তিনি ঢাকা থেকে বরিশাল আসেন ২০০৬ সালের ২৬ নভেম্বর।
মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও মেয়র শওকত হোসেন বলেন, ‘আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আমাদের অভিভাবক। তাই তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে এ বছর কোনো ব্যক্তির নামে তোরণ নির্মাণ করতে দেওয়া হয়নি। আয়োজন করা হয়েছে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক লস্কর নূরুল হক প্রথম আলোকে জানান, হাসানাত আবদুল্লাহকে স্বাগত জানাতে ভুরঘাটা থেকে বরিশাল শহর পর্যন্ত শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সড়কপথে ভুরঘাটায় আসার পর হাসানাত আবদুল্লাহকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়ে মোটর শোভাযাত্রাসহ বরিশাল নিয়ে আসা হবে। শোভাযাত্রায় অংশ নেবে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার, ট্রাকসহ কয়েক শ’ যানবাহন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন পানিসম্পদমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রা কালেক্টরেট ভবনের সামনে গিয়ে থামবে। সেখানে বিকেল চারটায় একটি মঞ্চে হাসানাত আবদুল্লাহকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
তার আগমন উপলক্ষে বরিশালের ডেকোরেটরের কর্মীরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কাজ করে নগরে অর্ধশতাধিক তোরণ নির্মাণ করেছেন। ফরিদপুর থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে ডেকোরেটরের কর্মী। নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে একটি বিশাল তোরণ নির্মিত হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই তোরণ নির্মাণে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।’ তিনি জানান, মাদারীপুর, কালকিনি, টরকী বন্দর, গৌরনদী, বাটাজোর, মাহিলারা, জয়শ্রী, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, রহমতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩০টি ডেকোরেটরের কয়েক শ’ শ্রমিক এসব তোরণ নির্মাণে অংশ নেন।
বরিশালের অংকন ডেকোরেটর সাতটি তোরণ নির্মাণ করে। এর শ্রমিক সরদার শাহ আলম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়না যে করছে, টাহা ওই পর্যন্ত। এরপর অনেককে বিছরাইয়াও (খুঁজে) পাওন যাইবে না।’
এই সংবর্ধনার ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশালের অনেক ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, তিনি তো সাধারণ একজন নেতা। সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী নন। তাঁর জন্য এত আয়োজন কেন?
আওয়ামী লীগের আরেকটি সূত্র জানায়, তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে বরিশালের ১০ উপজেলার বাইরে পাথরঘাটা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা থেকে নেতা-কর্মীদের আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৪ অক্টোবর ২০০৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন