শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৯

হাসানাতকে স্বাগত জানাতে বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি : ৪৬ কিলোমিটার মহাসড়ক সাজাবে আওয়ামী লীগ

সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ৪৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সুদৃশ্য তোরণ, শুভেচ্ছা ব্যানার এবং ছবি সংবলিত প্লাকার্ড বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সড়কপথে ঢাকা থেকে আসার সময় রাস্তার দু’ধারে ব্যাপক জনসমাগম, বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি পথসভা এবং নগরীতে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটিয়ে তাকে সংবর্ধনা দেবে তারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখার চেষ্টা চলছে দক্ষিণাঞ্চলের সব মন্ত্রী-এমপিকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র ৩ দিন পর বুধবার তার বরিশালে আগমনের দিন এভাবেই তাক লাগাতে চায় ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা। গত ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যান হাসানাত আবদুল্লাহ। জোট সরকারের ৫ বছর সেখানে থেকেই পরিচালনা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে চরমোনাইর পীরের মৃত্যু এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দু’বার এখানে এলেও কখনোই একদিনের বেশি থাকেননি। ওয়ান-ইলেভেনের কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য যান ভারতে। পরবর্তী ২ বছরে একাধিক মামলা এবং কারাদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আর দেশে ফেরা হয়নি। ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন শেষে ফিরে আসেন ঢাকায়। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের আজমির শরিফ যান শুকরিয়া আদায়ে। এরপরও বেশ কয়েকবার মেয়ে জামাইর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া-আসা করেন সেখানে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর দেন বরিশালে আসার কর্মসূচি। ওইদিন সড়কপথে ঢাকা থেকে আসবেন তিনি। এই আগমন উপলক্ষ্যেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। নেতার সন্তুষ্টি পেতে মাঠে নেমেছে ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা। বরিশাল-২ আসনের এমপি মনিকে আহ্বায়ক করে হয়েছে সংবর্ধনা প্রস্তুতি কমিটি। ঢাকায় প্রথম বৈঠকের পর শুক্রবার বরিশালে দ্বিতীয় বৈঠক করেছেন কমিটির নেতারা।
সংবর্ধনা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এমপি মনি যুগান্তরকে জানান, বুধবার সকালে বরিশালের সীমান্তবর্তী ভুরঘাটা এলাকায় উপস্থিত থাকব আমরা। সেখানেই প্রথম স্বাগত জানানো হবে জাতির জনকের এই ভাগ্নেকে। পরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন গৌরনদী, উজিরপুর এবং বাবুগঞ্জে পথসভা শেষে তিনি যাবেন বরিশালে। সেখানে ফজলুল হক এভিনিউতে দেয়া হবে গণসংবর্ধনা। বেশ জোরেশোরেই চলছে পুরো আয়োজনের প্রস্তুতি। গৌরনদী, উজিরপুর এবং বাবুগঞ্জের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা যুগান্তরকে বলেন, নেতাকে স্বাগত জানাতে ভুরঘাটা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আমরা নির্মাণ করব তোরণ। সেই সঙ্গে সড়কের দু’ধারে থাকবে স্বাগত বাণী সংবলিত ব্যানার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হাসানাত ও জাতির জনকের পাকার্ড। উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের এক নেতা বলেন, ‘সড়কজুড়ে রাস্তার দু’ধারে তাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতারা। সেই সঙ্গে চলবে পুষ্পবৃষ্টি। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ফজলুল হক এভিনিউতে আয়োজিত গণসংবর্ধনাকে পরিণত করা হবে জনসমুদ্রে। কেবলমাত্র বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং জেলার ১০ উপজেলাই নয়, পুরো বিভাগ থেকে আনা হবে দলীয় কর্মীদের। এ জন্য নিয়োজিত থাকবে বাস এবং লঞ্চ। দক্ষিণাঞ্চলের দুই প্রতিমন্ত্রী, হুইপসহ সব সাংসদ থাকবেন সংবর্ধনা মঞ্চে। ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন প্রতিমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, তিনি নিজে মোবাইলে ফোন করে মঞ্চে থাকার অনুরোধ করেছেন।
এদিকে প্রায় ৮ বছর পর হাসানাতের এই আগমন নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বরিশাল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও তাকে আসতে বাধা দেয়া হয়নি। তার এই আগমনে আমরা অখুশি নই। তবে আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের মতো কোন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, হাসানাতের আগমনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আরও চাঙ্গা হবে। মহাজোটের অংশীদার হিসেবে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এটুকুও বলতে চাই, তিনি চিফ হুইপ থাকা অবস্থায় তার পরিচয় ব্যবহার করে যেসব অঘটন ঘটেছে তার যেন কোন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সেক্ষেত্রে এবার কেবল আওয়ামী লীগই নয়, পুরো মহাজোটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, ১০ অক্টোবর ২০০৯
রিপোর্টঃ আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল ব্যুরো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন